নীলসাগর নীলফামারী - টুরিস্ট গাইড ২৪


                                                নিলফামারী নিলসাগর




    


নীলফামারী ঘুরে : নীলসাগর  পানি সমুদ্রের মতো নীল নয়, নেই সাগরের উত্তাল ঢেউ; নিম্নচাপের প্রভাবে গর্জে ওঠে না এটি, ভয় নেই জলোচ্ছ্বাসেরও। এরপরও এর নাম সাগর, নীলসাগর।
বলছি, উত্তরবঙ্গের সমৃদ্ধ জেলা নীলফামারীর বেশ পরিচিত পর্যটন স্পট নীলসাগর দিঘীর কথা। নীলফামারী-দেবীগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত বিশাল দিঘীটির কোমল বাতাস আর শান্ত জল যেনো নিমিষেই ক্লান্তি দূর করে দেয় কোনো পথিকের। ভুলিয়ে দেয় মধ্যবিত্ত জীবনের নানা টানাপোড়েনও! 
নিত্যদিনই ঐতিহ্যবাহী দিঘীটি দেখতে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। কোনো পথিকও পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক পলক দেখে এর শানবাঁধানো ঘাটে হাত ভিজিয়ে যান। অনেকে ছুটে আসেন পরিবার-পরিজন নিয়েও। 
নিলসাগর



নীলসাগর একটি ঐতিহাসিক দিঘি, যা বর্তমানে নীলফামারী জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৪ কিমিঃ দূরত্বে গোড়গ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত৷। মনে করা হয়, ঐতিহাসিক বৈদিক রাজা বিরাট এই দিঘি খনন করেন এবং তা বিরাট দিঘি হিসাবে পরিচিত ছিল৷ পরবর্তীকালে বিন্না দিঘি নামেও পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার পর নীলসাগর নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে এবং বর্তমানে এখানে ব্যাপক সংস্কার করে ভ্রমণ পিপাসুদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বত্‍সর শীত মৌসুমে অসংখ্য অতিথি পাখির সমাগম ঘটে এই নীলসাগরে।




অবস্থানসদর উপজেলার জিরো পয়েন্ট চৌরঙ্গী মোড় থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা মৌজায় ৫৩.৯০ একর জমির ওপর নীলসাগরের অবস্থান। এর জলভাগ ৩২.৭০ একর, এবং চারদিকের পাড়ের জমির পরিমাণ ২১ একরের মতো।

 
নিলসাগর

 

ইতিহাসঃআনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর কোন এক সময়ে এ জলাশয়টির খননকাজ শুরু হয়েছিল। নীল সাগর বিরাট দিঘি'বিন্না দিঘি' নামেও পরিচিত। হিন্দুশাস্ত্রমতে, খ্রিস্টপূর্ব নবম হতে অষ্টম শতাব্দীতে পান্ডবরা কৌরবদের চক্রান্তের শিকার হয়ে ১২ বছরের বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হন এবং মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজধানীর এ স্থানটিতে ছদ্মবেশে বসবাস শুরু করেন। মনে করা হয়, সেসময় নির্বাসিত পাণ্ডবদের তৃষ্ণা মেটাতে বৈদিক রাজা বিরাট এ দিঘিটি খনন করেছিলেন। বিরাট দিঘির অপভ্রংশ হিসেবে কালক্রমে এ দিঘিটি বিরাট দিঘি, বিল্টা দিঘি এবং অবশেষে বিন্না দিঘি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কারো কারো মতে, রাজা বিরাট তার বিশাল গরুর পালের জন্য পানির সংস্থান করতেই এ দিঘি খনন করেন এবং তার কন্যা বিন্নাবতীর নামে এর নামকরণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে নীলফামারীর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক ও অবসর প্রাপ্ত সচিব এম.এ জব্বার কর্তৃক এই দিঘিকে পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ও নীলফামারীর নামানুসারে বিন্না দিঘির পরিবর্তে এর নামকরণ করা হয় নীলসাগর।

 
নিলসাগর

 

নীলসাগরের আকর্ষণঃপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই মূলত নীলসাগর বিখ্যাত। এর পাড়ে রয়েছে নারকেল, বনবাবুল, আকাশমণি, মেহগনি, শিশুসহ অজানা-অচেনা হরেকরকম ফুল ও ফলের সারি সারি বৃক্ষরাজি। শীতকালে বিভিন্ন দেশের রাজহাঁস, মার্গেঞ্জার, মাছরাঙা, ভুবনচিল, সবুজ চান্দি ফুটকি, বাচাল নীল ফুটকি ইত্যাদি অতিথি পাখিদের সমাগমও বৃদ্ধি পায়, এছাড়াও পাশেই রয়েছে একটি ছোট পার্ক। ১৯৯৮ সালে এ এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব রাশেদ মোশারফ এ অভয়ারণ্যের উদ্বোধন করেন।



 
নিলসাগর


এখানে প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সনাতন (হিন্দু) সম্প্রদায় বারুণী স্নান উৎসবের আয়োজন করে থাকে। দিঘির পাশেই সরকারের অনুদানে একটি রেস্টহাউজ স্থাপন করা হয়ে

Comments

Popular posts from this blog

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার- টূরিস্ট গাইড ২৪

সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ - টুরিস্ট গাইড ২৪

ভিন্নজগত রংপুর - টুরিস্ট গাইড ২৪