চট্টগ্রামের ১৯টি দর্শনীয় স্থান যা দেখার মতো - টুরিস্ট গাইড ২৪
চট্টগ্রামের ১৯টি দর্শনীয় স্থান যা দেখার মতো
সীতাকুণ্ড : চট্টগ্রামের মূল শহরে প্রবেশের আগেই
সীতাকুণ্ড। বাসে বসেই দেখা যায় সুন্দর কিছু পাহাড়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ
জায়গাটির গুরুত্ব অনেক। রামায়ণে বর্ণিত কাহিনীর অন্যতম পটভূমি সীতাকুণ্ড। বৌদ্ধ
ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ স্থান কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমন্দির।
বৌদ্ধমন্দিরে গৌতম বৌদ্ধের পায়ের ছাপ রয়েছে। চন্দ্রনাথ মন্দিরটি হিন্দু
ধর্মাবলম্বীসহ সব মানুষের পছন্দের জায়গা। এটি অবস্থিত পাহাড়চূড়ায়। বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে সিভা
চতুর্দশী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
![]() |
বারো আউলিয়ার মাজার |
বারো আউলিয়ার মাজার : প্রাচীন বাংলায়
এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচারক হিসেবে আগমন ঘটে বারো ভূঁইয়ার। বারো আউলিয়ার মৃত্যুর পর
তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে গড়ে ওঠে বারো আউলিয়া মাজার। মাজারটি রাস্তার পাশেই।
![]() |
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত |
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত : সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে দ্বিতীয়
কক্সবাজার হচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। এটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। পতেঙ্গা
সমুদ্রসৈকতে পৌঁছার আগে চোখে পড়বে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই পাশে
ঝাউগাছের সারি।
![]() |
ইকোপার্ক |
ইকোপার্ক : সীতাকুণ্ড থানার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে
অবস্থিত ইকোপার্ক। ৯৯৬ একরের এ উঁচু-নিচু পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং
নানা ধরনের পশুপাখি।
![]() |
শহীদ জিয়া জাদুঘর |
শহীদ জিয়া জাদুঘর : এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বিপরীত দিকে একটি
শিশুপার্ক। শিশুপার্ক ছাড়িয়ে লালখান বাজার যাওয়ার পথ ধরে সামান্য হাঁটলেই রাস্তার
ডানদিকে শহীদ জিয়া জাদুঘর। টিকিট কেটে জাদুঘরে ঢুকতে হয়। সার্কিট হাউসের যে ঘরটিতে
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। সেই ঘরের স্মৃতিচিহ্নসহ জিয়াউর রহমান
ব্যবহƒত নানা জিনিসপত্র এবং তার বেশকিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে এখানে।
রয়েছে চট্টগ্রাম কালুরঘাটে খালকাটা কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানরত অবস্থায় শহীদ জিয়ার
একটি ভাস্কর্য।
![]() |
বাটালি পাহাড় |
বাটালি পাহাড় : টাইগার পাস এবং লালখান বাজারের
মাঝামাঝি অবস্থান বাটালি পাহাড়ের। বোদ্ধা ব্যক্তিরা বলে থাকেন, চট্টগ্রামের
প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই টাইগার পাস আসতে হবে এবং বাটালি পাহাড়ে
উঠতে হবে। বাটালি পাহাড়ে রয়েছে হরেক রকম গাছপালা। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য পাহাড় কেটে
সুবিন্যস্তভাবে তৈরি করা সিঁড়ি। বাটালি পাহাড় থেকে পুরো চট্টগ্রাম দেখা যায়। মনে
হবে, পাহাড়ের কোলে গা ঘেঁষে ঘুমাচ্ছে চট্টগ্রাম।
![]() |
চেরাগী পাহাড় |
চেরাগী
পাহাড় : চেরাগী পাহাড় পত্রিকাপাড়া নামেও পরিচিত। এখানে প্রায় সব জাতীয়
পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও চ্যানেল, ইন্টারনেটভিত্তিক
সংবাদমাধ্যমের অফিস রয়েছে। রয়েছে স্থানীয় পত্রিকার অফিসও। চট্টগ্রামের সবচেয়ে
প্রভাবশালী এবং প্রাচীন পত্রিকা প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর
অফিস এখানেই।
তারপরই
আন্দরকিল্লা। আন্দরকিল্লায় রয়েছে শাহী মসজিদ, জেএম সেন হলে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধাপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষমূর্তি।
এর একটু দুরেই চকবাজার। যেখানে দুটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সুপ্রাচীন অলি খাঁ মসজিদ ও নানক গুরুদুয়ার
এর একটু দুরেই চকবাজার। যেখানে দুটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সুপ্রাচীন অলি খাঁ মসজিদ ও নানক গুরুদুয়ার
![]() |
লালদীঘি |
লালদীঘি : লালদীঘির ময়দান নানা কারণে মানুষের
কাছে বহুল পরিচিত। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ স্থল এটি। বিভিন্ন
সভা-সমাবেশে যে পরিমাণ মানুষ জমায়েত হয় তা বিস্ময়কর। এছাড়া সংগ্রাম-আন্দোলনের
অন্যতম, প্রধানতম বললেও ভুল হবে না, সূতিকাগার এটি।
ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা এখানেই হয়।
![]() |
পারকি সমুদ্রসৈকত |
পারকি সমুদ্রসৈকত : চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরেই এটির
অবস্থান। আনোয়ারা থানায় গড়ে ওঠা এ নয়নজুড়ানো সমুদ্রসৈকত তেমন একটা পরিচিতি পায়নি।
সৈকতের পাড় ঘেঁষে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ঝাউবন। জায়গাটা সবসময় চিকচিক
বালিতে ভরে থাকে বলে রসিকজনেরা বলে থাকেন বালুবনে ঝাউবন! সমুদ্রের কথা বাদ দিলেও
শুধু ঝাউবনের আকর্ষণে অনেকেই ছুটে যান পারকিতে। সৈকতে সামুদ্রিক কাঁকড়ার অবাধ
বিচরণ নির্মল আনন্দদান করে। রয়েছে নোঙ্গর করা জাহাজ সারি।
![]() |
ওয়ার সিমেট্টি |
ওয়ার সিমেট্টি : নগরীর প্রবর্তক মোড় পেরিয়ে বাদশা মিয়া
রোডে এর অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের একাংশ এখানে সমাহিত করা
হয়েছে। ফুলের বাগান বেষ্টিত মনোরম এ স্থান স্মরণ করিয়ে দেয় সেইসব সৈন্যদের
শৌর্যবীর্য ও বীরত্বগাথা। ছোট ছোট সমাধিফলক সারিবদ্ধভাবে সাজানো।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার : মাতৃভক্তি এবং ধর্মীয় কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন বায়েজিদ বোস্তামী। মাজার পুকুরে রয়েছে দানবাকৃতির অনেকগুলো কাছিম। জনশ্রতি আছে, কাছিমগুলোর বয়স কয়েক শত বছর। এছাড়াও স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরাজউদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা হামিদিয়া তাজ মসজিদ। প্রায় তিনশ’ বছর আগে নির্মিত এ মসজিদটির সৌন্দর্য এখনও মানুষকে বিমোহিত করে
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার : মাতৃভক্তি এবং ধর্মীয় কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন বায়েজিদ বোস্তামী। মাজার পুকুরে রয়েছে দানবাকৃতির অনেকগুলো কাছিম। জনশ্রতি আছে, কাছিমগুলোর বয়স কয়েক শত বছর। এছাড়াও স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরাজউদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা হামিদিয়া তাজ মসজিদ। প্রায় তিনশ’ বছর আগে নির্মিত এ মসজিদটির সৌন্দর্য এখনও মানুষকে বিমোহিত করে
![]() |
সন্দ্বীপ |
সন্দ্বীপ : অনেকেই ভুল করে সন্দ্বীপকে নোয়াখালী
জেলার অংশ ভাবেন। আসলে এটা চট্টগ্রামেরই একটি থানা। যদিও ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতি
অনেকটা নোয়াখালীর মতোই। জলবেষ্টিত এ সুন্দর দ্বীপের আয়তন খুব একটা বেশি নয়, তুলনামূলক
জনসংখ্যাও কম। দুইভাবেই সন্দ্বীপ যাওয়া যায়।
![]() |
বিপ্লব উদ্যান |
বিপ্লব
উদ্যান : ষোলশহর দুই নম্বর গেটের আকারে ছোট
কিন্তু ছিমছাম পার্ক বিপ্লব উদ্যানের অবস্থান। এটি দর্শনার্থীদের জন্য উš§ুক্ত করে দেয়া
হয় বিকাল চারটার পর। নগরবাসীর এবং পর্যটকদের একটুখানি নিঃশ্বাস ফেলার এবং নেয়ার
বিশ্বস্ত জায়গা এটি। ফুলবাগান, কয়েক ধরনের গাছের পাশাপাশি প্রধানতম
আকর্ষণ স্বাধীনতা ভাস্কর্য।
![]() |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস : সর্বোচ্চ
বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। শিক্ষার
কথা বাদ দিলে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি অদ্বিতীয়। এ সৌন্দর্যের তুলনা নেই। নৈসর্গিক
সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়ের উপরে স্থাপিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। পাহাড় কেটে কেটে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তা যে কাউকেই
মুগ্ধ করবে। দুইপাশে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা যমজ পাহাড়, মাঝখানে পাহাড়ের
বুক চিরে চলে গেছে সরু রাস্তা। মনোমুগ্ধকর দৃশ্যই বটে।
এ
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের
সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে শাটল ট্রেন ব্যবস্থাটি। একমাত্র চট্টগাম ছাড়া দেশের
আর কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা নেই। এ শাটল ট্রেনের আড্ডা
কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গেছে। সুযোগ হলে শাটল ট্রেনে চড়ে বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করা
যেতে পারে। অবশ্য অছাত্রদের জন্য শাটল ট্রেনে চড়ার বিধিসম্মত কোন ব্যবস্থা নেই!
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য
বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার
![]() |
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার |
বায়েজিদ বোস্তামীর
মাজার ঃচট্টগ্রাম এর নাসিরাবাদের একটি
পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে
গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশী
বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান।
বর্ণনা
এই সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১
সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে আবিস্কার করা হয়। আঙ্গিনার
ঠিক মাঝামাঝি একটি শবাধার অবস্থিত। পরবর্তীতে সমাধিস্থলটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা
প্রতিস্থাপিত হয়। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ মোঘলরীতির
আয়তাকার মসজিদ এবং একটি বিশালাকার দীঘি আছে। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয়
মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত।
জনশ্রুতি
যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর নাম
অনুসারে এই মাজার, ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ
বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়না। ধারণা করা
হয় সুফী সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড় এর
উপরে কিংবা জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব জায়গাতে মাজার কিংবা এই
ধরণের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারটাও মূলত উনাকে
উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।
যদিও এলাকার জনশ্রূতি অনুযায়ী
বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে
অবস্থানের পরে প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের
ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে
যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান। এই জনশ্রুতির
স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে
শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে। বায়েজীদ বোস্তামীকে যেহেতু সুলতান
উল আরেফীন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় যেই সূত্রে এই শাহ সুলতান আর সুলতান উল আরেফীন
কে একই ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
বোস্তামীর কাছিম
বোস্তামীর কাছিম |
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের
পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি অবস্থিত। এর বাসিন্দা হিসাবে বোস্তামীর কাছিম ও গজার
মাছ সুবিখ্যাত। আঞ্চলিকভাবে এদের মাজারী ও গজারী বলে আখ্যায়িত করা হয়। বোস্তামীর
কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায়
প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গন ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও
এদের দেখা মিলে না। মাজারের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা মাজার তত্বাবধায়ক কমিটির
লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে
দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রজনন মৌসুমে
মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা
হয়।
মাজারের ভক্তকূল ও আঞ্চলিক
জনশ্রূতি অনুযায়ী মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপীষ্ঠ
আত্মার পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামী তার এই অঞ্চলে ভ্রমনকালে এইসব দুষ্ট
আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন এবং আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান
করেন।
কিভাবে যাওয়া যায়:
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য
বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।
লালদীঘি
![]() |
লালদিঘি |
ইতিহাস
১৭৬১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
চট্টগ্রামের শাসনভার লাভ করে। সেই সময় এন্তেকালী কাছারি অর্থাৎ জমি সংক্রান্ত
তহসিল অফিসে (বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস) লাল রঙ দেয়া হয়েছিল। এটিকে লোকজন
তাই “লালকুঠি” বলে চিনত। এই লাল কুঠির পুর্ব দিকে ছিল জেলখানা। এটিকে ও লাল রঙ
করা হয়েছিল এবং তাই এটি “লালঘর” নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ভবন দুটো লাল পাগড়ী পরিহিত ব্রিটিশ
পাহাড়াদারেরা পাহাড়া দিত। অনেকেই মনে করেন এ কারনেই ভবনগুলোর নাম লাল ঘর এবং লাল
কুঠি। লাল ঘর এবং লাল কুঠির পাশে একটা ছোট পুকুর ছিলো। চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসনের
সূচনালগ্ণে পুকুরটিকে বড় করে দিঘিতে পরিণত করা হয়। পাশেই দুটো লাল রঙের ভবন ছিল
বলেই এই দিঘিটা লালদিঘি নামে পরিচিত হয়।
লালদিঘির মালিকানা
লালদিঘির উত্তর পাশে রয়েছে একটা
মঠ যার গম্বুজে লেখা আছে ১৯৩৯ সাল। এটার গায়ে লেখা আছে রায় বাহাদুর রাজকমল ঘোষের
নাম। রায় বাহাদুর ছিলেন একজন জমিদার। তাঁর নিজ বাড়ি ছিল রাউজান উপজেলার চিকদাইর
গ্রামে। তিনি অবসর সময় কাটাতেন তখনকার খোলামেলা লালদিঘির পাড়ে। তিনি ছিলেন
লালদিঘির অভিভাবক। পরবর্তিতে তিনি দিঘিটির মালিকানা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের
হাতে তুলে দেন।
রিকেট ঘাট
লালদিঘির পশ্চিম পাড়ে ছিলো “রিকেট ঘাট”। ১৯৪১ হতে ১৯৪৮ পর্যন্ত চট্টগ্রামের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করা
স্যার হেনরী রিকেটস এর স্বরণে চট্টগ্রামের জমিদারেরা এই ঘাট নির্মান করেছিলেন। মিঃ
হার্ভে ১৮৩১-১৮৩৯ সালে চট্টগ্রামের কালেক্টর ছিলেন। তিনি ৩২ ডেপুটি কালেক্টর ও
কয়েকজন জরিপ আমিন নিয়ে জরিপের কাজ শুরু করেন। জরিপে তিনি ২০ গন্ডার স্থলে ১৮
গন্ডায় কানি হিসাব করেন। একারনে তাঁর উপর সবাই এত অসন্তুষ্ট হয়েছিল যে আনোয়ারা
থানায় লোকজন তাকে আক্রমণ করে। তিনি তারপর সৈন্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন। এই খবর
পেয়ে কর্ত্পক্ষ মিঃ রিকেটকে প্রেরণ করে। ১২০০ মঘীর জরিপের সময় চট্টগ্রাম বাসীর
উপকার করে তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন হয়েছিলেন। ঊনবিংশ শতকে চট্টগ্রামের সেশন জজ
টোডেল সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর শবদেহ রিকেট ঘাটের উত্তর দিকে দাহ করা হয়। তাঁর
স্মৃতিতে নির্মান করা স্তম্ভটি পরবর্তীকালে ভেঙ্গে ফেলা হয়।
লালদিঘির ময়দান
মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের
পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পশ্চিমে পরীর পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পুরো জায়গাটা সেকালে
মিউনিসিপাল ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৮৮৭ সালে এই ময়দানে মহারানী ভিক্টোরিয়ার
মূর্তি স্থাপন করা হয়। চল্লিশের দশকে স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগে এই মূর্তি অপসারন
করা হয়। ঊনবিংশ শতকের শেষে উত্তর-দক্ষিন রাস্তাটি হবার পর মিউনিসিপাল ময়দান দুইভাগে
বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব দিক সাধারন জনগনের খেলার মাঠে রূপান্তরিত হয়। মুসলিম
উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তখন সে মাঠ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে
পরিনত হয়। এই মাঠ এখন লালদিঘির মাঠ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
লালদিঘির কিংবদন্তি
লাল দীঘির ঘটনা নিয়ে চট্টগ্রামের
মানুষের মুখে একটা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। একবার এক দিনমজুরের মেয়ে ঐ দিঘীতে গোছল
করতে নেমেছিলো। হঠাৎ পায়ে শিকল বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো জলের নিচে একটা
দেশে। আসলে ঐটা ছিলো এক বাদশার দরবার। সেই বাদশার বিয়ে ঠিক হয়েছিল লাল বেগমের
সাথে। একদিন বাদশা লাল বেগমকে দেখতে চাইলেন কিন্তু খবর পাওয়া গেলো লাল বেগম তার
মুল্লক থেকে এক ক্রীতদাসের সাথে পালিয়েছে। এ খবর বাদশা তখন জানতেন না। তাই মজুরের
ঐ মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে বাদশার সাথে লাল বেগমের অভিনয় করার জন্য। অনেক
কথাপ্রসঙ্গে বাদশা মেয়েটার আসল পরিচয় জেনে যায়। ক্ষুদ্ধ বাদশার নির্দেশে সবাই
আসল লাল বেগমকে খুজতে লেগে গেলো। তখন জানা গেলো সে অন্দর কিল্লার দীঘি থেকে দু’শ হাত দূরে পর্তুগীজদের কিল্লায় আছে। বাদশা ঐ কিল্লায় আক্রমণ
করে। অনেক অনেক খুনে লাল হয়ে গেলো দিঘীর পানি। বাদশা পরাজিত হল সেই যুদ্ধে। সবাই
পালিয়ে গেল। তবুও সে দিঘির পাড়ে বাদশা থেকে গেল লাল বেগমকে উদ্ধার করার আশা
নিয়ে। এই নিয়ে একজন চারন কবি লিখেছেনঃ “লালদিঘিতে আগুন
ধরে/জল শুকিয়ে গিয়েছে,/মাছগুলো সব ডাঙ্গায় উঠে/কিলবিল
করতে লেগেছে“।
অনুষ্ঠান
লালদিঘির পাড়ে ১৯১০ সালে বৈশাখের
১২ তারিখ আবদুল জব্বার সর্বপ্রথম বলীখেলা অনুষ্ঠান করেন। তখন থেকে প্রতি বছর
বৈশাখের ১২ তারিখ লালদিঘির পাড়ে জব্বারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।[ বর্তমানে
লালদিঘির পশ্চিম পাড়ে একটি মসজিদ আছে। শহরবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্য এখানে একটি
সবুজ গাছপালা ঘেরা পার্ক আছে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য
বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভাটিয়ারী
প্রকৃতির অপার
সৌন্দর্যে গড়ে ওঠা ভাটিয়ারীগলফ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব দেশের প্রায় ১২টি গলফ
ক্লাবের মধ্যে সেরা। সুবিশাল আয়তনের ও প্রাকৃতিক সোন্দর্যের অধিকারী এ ক্লাবের
সদস্য প্রায় ৮শ’।চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরেই ভাটিয়ারী গলফ
এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবটি প্রকৃতিকে জড়িয়ে রেখেছে। ভাটিয়ারী-হাটহাজারী সড়কে মিনিট
খানেক গাড়িএগুলেই পাহাড়ীপথের শুরুটাই এমন যে তাক লাগিয়ে দেয় আগতদের। রাস্তার দু’ধারেরয়েছে জোড়া লেক। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা এ মাঠের দৈর্ঘ্য
প্রায় সাড়ে ৬হাজার গজ। ক্লাবের সামনেই রয়েছে এক গলফারের ভাস্কর্য।
সীতাকুণ্ডে, ভ্রমনকারীদের জন্য ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব অন্যতম একটি আকর্ষনীয়
স্থান যা প্রাকৃতিক জলাধার এবং পাহাড় দিয়ে আবৃত। এখানে বিভিন্ন ধরনের এবং
বিভিন্ন জাতের গাছ, পশু এবং পাখি দেখা যায়। এ থেকেই
বুঝা যায়যে এই এলাকাও প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যে পরিপূর্ণ। যদিও এই এলাকা
বাংলাদেশমিলিটারী একাডেমীর নিয়ন্ত্রনাধীন, ভ্রমণকারীরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এ এলাকা ভ্রমন
করতে পারবেন। আপনি এলাকায় প্রবেশ করারসময় কোন ক্যামেরা, রেকডিং ডিভাইস আনতে পারবেন না এবং আপনি এ এলাকার কোন ছবি তুলতে
পারবেন না। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে মান সম্পন্নগলফ ক্লাব। এখানে
সারা বছর ধরে নানা দেশী এবং আর্ন্তজাতিক গলফ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
কিভাবে যাওয়া যায়:
চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি
দূরেই সীতাকুন্ড উপজেলায় ভাটিয়ারী গলফ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবটি অবস্থিত।
ভাটিয়ারী-হাটহাজারী সড়কে মিনিটখানেক গাড়ি এগুলেই পৌছে যাওয়া যায় গলফ ক্লাবে।
হালদা নদী
![]() |
হালদা নদি |
হালদা নদিঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী। পার্বত্য চট্টগ্রামের
বাটনাতলী পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে এটি ফটিকছড়ির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায়
প্রবেশ করেছে। এটি এর পর দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পরে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফটিকছড়ির
বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, ও অন্যান্য অংশ, হাটহাজারী, রাউজান, এবং চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালী থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এটি কালুরঘাটের নিকটে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮১
কিলোমিটার, যার মধ্যে ২৯ কিলোমিটার অংশ সারা
বছর বড় নৌকা চলাচলের উপযোগী থাকে।
নামকরণ :
হালদা খালের
উৎপত্তি স্থল মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ী গ্রাম সালদা। সালদার
পাহাড়ী র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে হালদা নামকরণ হয়। সালদা নামে
বাংলাদেশে আরো একটি নদী আছে যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন
ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী :
![]() |
হালদা উপনদি |
হালদা খালের
উৎপত্তি স্থল মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ী গ্রাম সালদা। সালদার
পাহাড়ী র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে হালদা নামকরণ হয়।সালদা নামে
বাংলাদেশে আরো একটি নদী আছে যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন
ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
মাছের ডিম ছাড়া
:
প্রতিবছর হালদা
নদীতে একটি বিশেষ মূহুর্তে ও বিশেষ পরিবেশে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাতৃমাছ
প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে তিথি বলা হয়ে থাকে। স্থানীয়
জেলেরা ডিম ছাড়ার তিথির পূর্বেই নদীতে অবস্থান নেন এবং ডিম সংগ্রহ করেন। ডিম সংগ্রহ
করে তারা বিভিন্ন বাণিজ্যিক হ্যাচারীতে উচ্চমূল্যে বিক্রী করেন।
হালদা নদীতে
রুই মাছ ছাড়ার কারণ :
হালদা নদী এবং
নদীর পানির কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এখানে মাছ ডিম ছাড়তে আসে যা বাংলাদেশের
অন্যান্য নদী থেকে ভিন্ন তর । এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভৌতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক। ভৌতিক কারন গুলোর মধ্যে রয়েছে নদীর বাঁক , অনেকগুলো নিপাতিত পাহাড়ী ঝর্ণা বা ছড়া , প্রতিটি পতিত ছড়ার উজানে এক বা একাধিক বিল, নদীর গভীরতা ,
কম তাপমাত্রা , তীব্র খরস্রোত এবং অতি ঘোলাত্ব । রাসায়নিক কারণ গুলোর মধ্যে
রয়েছে কম কন্ডাক্টিভিটি , সহনশীল দ্রবীভুত অক্সিজেন । জৈবিক
কারণ গুলো হচ্ছে বর্ষার সময় প্রথম বর্ষণের পর বিল থাকার কারণে এবং দুকুলের
বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীর পানিতে প্রচুর জৈব উপাদানের মিশ্রণের ফলে
পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রাচুর্য থাকে যা প্রজনন পূর্ব গোনাডের পরিপক্কতায় সাহায্য
করে। অনেক গুলো পাহাড়ী ঝর্ণা বিধৌত পানিতে প্রচুর ম্যেক্রো ও মাইক্রো পুষ্টি
উপাদান থাকার ফলে নদীতে পর্যাপ্ত খাদ্যাণু র সৃষ্টি হয় , এই সব বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে হালদা নদীতে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির
মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছকে বর্ষাকালে ডিম ছাড়তে উদ্ভুদ্ধ করে য বাংলাদেশের অন্যান্য
নদী থেকে আলাদা।
কিভাবে যাওয়া যায়:
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য
বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।
Comments
Post a Comment