হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান- টুরিস্ট গাইড ২৪
হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান


হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার
জেলার হিমছড়িতে অবস্থিত।
উদ্যানটি ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ১৭২৯ হেক্টর
(১৭.২৯ বর্গ কিলোমিটার) জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান
স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা ও শিক্ষণ, পর্যটন ও বিনোদন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। হিমছড়ির
একপাশে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের সারি।
উদ্যানে অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে, যার মধ্যে হিমছড়ি জলপ্রপাতটি সবচেয়ে বিখ্যাত।
হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
হিমছড়ি
![]() |
কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এক সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি। এখানকার সৈকতের চেয়েও আকর্ষণীয় হলো এর ভ্রমণ পথ। সৈকত লাগোয়া আকাশ ছোঁয়া পাহাড় এখানের অন্যতম আকর্ষণ। হিমছড়ির পাহাড়ের হিম শীতল ঝরণাও বেশ আকর্ষণীয়। কক্সবাজার সৈকত থেকে সবসময়ই খোলা জীপ ছাড়ে হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। জনপ্রতি ভাড়া ৭০-১০০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে লাগবে ১৪০০-১৬০০ টাকা। এছাড়া রিকশা করেও যাওয়া যায় হিমছড়িতে। যাওয়া আসার ভাড়া লাগবে ৩০০-৩৫০ টাকা। আর ব্যাটারি চালিত রিকশায় গেলে যাওয়া আসার ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা।
জীববৈচিত্র্য
![]() |
হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি চিরসবুজ ও প্রায়-চিরসবুজ ক্রান্তীয় বৃক্ষের বনাঞ্চল। বনের ১১৭ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ,১৫ প্রজাতির গুল্ম , ৪ প্রজাতির তৃণ, ১৯ প্রজাতির লতা এবং ২১ প্রজাতির ভেষজ।
হিমছড়ি বনাঞ্চল হাতির আবাসস্থল বলে ধারনা করা হয়। এছাড়া এ বনে মায়া হরিণ, বন্য শুকর ও বানর দেখা যায়। এ বনে ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী পাওয়া যায়। হিমছড়ি বনাঞ্চল উল্লুকের আবাসস্থল।
পাখিপ্রেমীদের জন্য হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি আদর্শ স্থান। এর ২৮৬ প্রজাতির পাখির মধ্যে ময়না, ফিঙ্গে ও তাল বাতাসি উল্লেখযোগ্য।
হিমছড়ি ও ইনানী বিচ ভ্রমন
![]() |
কক্সবাজারের ১২ থেকে ২২
কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে দুটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। একটি হলো হিমছড়ি এবং অন্যটি হলো ইনানী। কক্সবাজার
সমুদ্র থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার
দূরে রয়েছে অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত ইনানী সমুদ্র সৈকত। আর এই সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথে মাত্র ১২ কিলোমিটার
গেলেই পাওয়া যাবে আরেক দর্শনীয়
পর্যটন স্থান হিমছড়ি।
![]() |
কলাতলী থেকে জিপে
চড়ে যেতে পারেন এ জায়গা দুটিতে। খুব সকালে গেলে জায়গা দুটি ঘুরে আবার দুপুরের মধ্যেই ফিরতে পারবেন কক্সবাজার
শহরে। কক্সবাজার থেকে জিপে যেতে
পারবেন এখানে। রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে দেড় থেকে আড়াইহাজার টাকা। আর লোকাল জিপে গেলে এ জায়গা দুটি ঘুরে আসতে জনপ্রতি
খরচ হবে দুই আড়াইশ টাকা।
ইনানী সমুদ্র সৈকত
![]() |
হিমছড়ি ছাড়িয়ে প্রায় আট কিলোমিটার পুবে আরেক আকর্ষণীয় সৈকত ইনানী। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার ভেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। এখানে এলে খুঁজে পাওয়া যায় সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে। রিজার্ভ জীপ নিলে লাগবে ১৮০০-২৫০০ টাকা। একটি জীপে ১০-১৫জন অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়। দু তিন জন হলে ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়েও যেতে পারেন। সারাদিনের জন্য সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০টাকা
হিমছড়ি’র ভয়ংকর
![]() |
পর্তুগীজ প্রেতসাধক বেনিত্তা হিমছড়ির এক প্রাচীন দুর্গবাড়িতে আস্তানা গেড়েছে। সে চায় তার পূর্বপুরুষ সিস্তান বাতিস্তার আত্মাকে পুনর্জীবিত করতে। কারণ সেই আত্মাই তাকে দিবে জলদস্যুদের লুট করা জাহাজে রক্ষিত গুপ্তধনের সন্ধান। বাতিস্তাকে পুনর্জীবিত করবার জন্য প্রয়োজন ১০ টা নীল চোখের ছেলের ১০ জোড়া চোখ আর ৩০ টা আঙুল। সহায়ক হিসাবে তার সঙ্গে আছে বার্মার মংডু পাহাড়ের বসবাস করা আরেক প্রেতসাধক আর একটা সবুজ দাঁড়কাক।
এই অশুভ শক্তির প্রভাবে হিমছড়ি’তে ঘটতে শুরু করল ভয়াল সব ঘটনা। নিরুদ্দেশ হতে লাগল নীল চোখের ছেলেরা যাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় নিরুদ্দেশ হওয়ার পরদিন সমুদ্রের বেলাভূমিতে কিংবা ঝাউবনের আড়ালে। এমন সময়েই টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এল অভিযাত্রীর এক দল যাদের এক সদস্যের চোখজোড়া সমুদ্রের মত নীল। ঘটনাচক্রে তাদেরও সংঘাত ঘটল এই ভয়াল চক্রের সাথে। এখন কি হবে? তাঁরা কি পারবে এই অশুভ শক্তিতে সমূলে বিনাশ করতে? কিভাবে?
![]() |
মোটামুটি এই হচ্ছে “হিমছড়ি’র ভয়ংকর” গল্পের কাহিনী। আমার কৈশোরকে যেইসকল লেখকরা তীব্রভাবে আন্দোলিত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আলী ইমাম। তাঁর রহস্য উপন্যাসগুলো গোগ্রাসে গিলতাম। এই বই পড়েই প্রথম হিমছড়ি’র প্রতি আমার আগ্রহ জাগে। সেই আগ্রহ চরমে উঠবার পিছনে একটা ভিন্ন কাহিনী আছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে ঢাকা এসেছিলাম। একদিন ফার্মগেট থেকে মালিবাগ যাচ্ছি এমন সময় বাসে হকার উঠে সাধারণ জ্ঞানের বই বিক্রি করছিলেন। ৫ টাকা মূল্যমানের সেই বই ভর্তি ছিল আজব সব তথ্যে। তার মধ্যে দুটো তথ্য এখনও মনে আছে।
প্রশ্ন-১ঃ কোন দেশে Condom নামে একখান শহর আছে?
উত্তরঃ ফ্রান্স
প্রশ্ন-২ঃ বাংলাদেশের কোথায় গরম পানির ঝর্ণা আছে?
উত্তরঃ হিমছড়ি’তে
![]() | |||
আরেকটা প্রশ্ন ছিল, কোন দেশের মানুষের শরীরের রঙ নীল। এইটার উত্তর অবশ্য ভুলে গেছি। তো যা বলছিলাম। তখন থেকেই হিমছড়ি যাওয়ার আগ্রহ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু কক্সবাজার কয়েকবার গেলেও হিমছড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে নি। এইবার ছুটি ম্যানেজ হওয়া মাত্রই সিদ্ধান্ত নিলাম, গরম পানির ঝর্ণায় গোসল আমাকে করতেই হবে। সেই সাথে বোনাস হিসাবে পর্তুগীজ জলদস্যুর আস্তানাও যদি দেখে আসা যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। অতএব, গন্তব্য হিমছড়ি।
হিমছড়ি ঝর্ণার অবস্থান হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভিতরে। ভালই হল। এমনিতেই পাহাড় আর অরণ্য আমাকে খুব টানে। এইবার তো এক ঢিলেই সব পাখি মারা যাবে। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের অবস্থান কক্সবাজার জেলার হিমছড়িতে। উদ্যানটি ১৯৮০ সালে কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ১৭২৯ হেক্টর (১৭.২৯ বর্গ কিলোমিটার) জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। হিমছড়ির একপাশে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের সারি যা বাংলাদেশের অন্যান্য জাতীয় উদ্যান থেকে এটিকে অনন্য করেছে।
Comments
Post a Comment